।। বাক্‌ ।। রবিবারের চতুর্ভুজ ।।






মলয় রায়চৌধুরীর শ্রেষ্ঠ বাজে  কবিতা



যখন শুক্রকীট জন্মাতে লাগলো ধাতুরসে
তখন কবিতা পয়দা হবার পালা এলো
শুক্ররা শব্দের মতন ছিল, বহুকাল
তাদের মুঠোয় করে ফেলে দিয়েছি বাথরুমে
তারপর তাদের ফেলার জায়গা কিনে ফেলতে লাগলুম
শুক্রেরা সেখানে ঢুকে গুঁতোগুঁতি করে জিততে পারেনি
কবিতা হলেও তাতে শব্দের ঢোকবার অনুমতি নেই
শব্দরা কবিতায় ঢোকার পরেও মরে যেতে বাধ্য হলো
সার্থক কবিতা মানে যেখানে শব্দেরা নিজেরা যুদ্ধ করে
কেবল একজন জেতে যার জন্য কবিতা উৎরে যায়

এখন কবিতাও বাণিজ্য, শুক্রকীটগুলো নেমেছে বাজারে
বিক্রি হয় বিক্রি হয় বিক্রি হয় যাতে কোনো প্রতিবিপ্লবে
অংশ নিতে পারে ; কবিতা দিয়ে তো বিপ্লব হলোনো কোথাও
কেবল শব্দবাজি সাঁতরে ভেতরে ঢুকে যদি তাকে পয়দা করা যায়
পয়দাই আসল কথা, তাই স্তালিন মাও চসেস্কু পলপট
লক্ষ মানুষকে তত্বে পুঁতে  শ্রেষ্ঠ সার্থক কবিতা লিখলেন
সফল শুক্রকীটগুলো গুমখুন হাপিশ লাশ হয়ে মার্কসকেও
ডোবালো শব্দের ধোঁয়াজালে ; কবিতা মাত্রেই শুক্রবীজে ঠাসা
অজস্র মানুষের মতো তত্ত্বের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যে মারা পড়ে
কেউই জানে না কোন শুক্র ঢুকবে বাণিজ্যের সনেটযোনিতে 
নাকি গুলাগের শীতোর্ধ শীতে জমে থাকবে চতুর্দশপদে
কিংবা মার্কিন ধলার বুলেটে মরা আফ্রিকি পেশীর গহ্বরে








ব্যর্থ নমস্কারে
বিশ্বরূপ দে সরকার


জড়িয়ে নিয়েছো দেখিনি কোনোদিন
স্পর্শে পাওয়া কবিতার জলমাটি
ধানের ক্ষেতে ভেসে আসা কোনো বীজ
বলেনি জাগাও মনোপলি এই মর্মর
তরুণ আঘাত গড়িয়ে নামছে চাঁদে
গত দিনগুলো বিন্দু বিন্দু স্বাদে
মনে করো তুমি ফিনফিনে আর ঘন
এমন দিনেতো থেমে যাওয়া কোন পথে
নরম নূরের জলবায়ু উড়ে এলো
ভাঙা আঙ্গিকে অথচ গন্ধে বোনা
মনকেমনের মোচড়ানো ভঙ্গিমা
জানি সারারাত আহত পেনসিলে
লাগিয়া থাকিল জীবনাবসান গুলি
দুঃখ বিলাসী এসব হাঁসের ঝাঁপ
খুলিয়া দেখিনি আপত্তি ছিল কি না
তবু মহোদয় করার কী কিছু আছে
তন্বী কিংবা পৃথুলা খরগোশ

জঙ্গি হবে না লতাপাতা চমৎকারে 





তমসো মা জ্যোতির্গময়
রত্নদীপা দে ঘোষ



কালীমন্দিরের মাংস খেতে খেতে মনে হল
ইটগুলি গো-রক্তে ভারি, কাবাব-শূকর নাড়ী ভুঁড়ি
আধসেদ্ধ রুদ্রাক্ষ। কালীমন্দিরের ডান ঠ্যাং খুব শক্ত
আর ঠাণ্ডা। আরাম কোরে চিবোনো যায় না এমন
রুক্ষ নলীহাড়, ধানদুব্বো বাম হাতের আঙুলগুলি
মৃতমুর্গির হলদে মজ্জাচ্যাপ্টা পাঁজর ডানাছাঁটা
পাংশুটে, রাঙ ঝলসানো খেতে খেতে মনে হল
কালীমন্দিরগুলি ভাগাড়ের আলো দিয়ে বানানো



বেশ্যাপাড়ায় দেখেছি কালীমন্দির, প্রথম।
গুহাজল নভোজল সাঁতলানো সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়
শুচি-অশুচির গোখরো, ইয়া বড়োআশ্চর্য বড়ো কালীমন্দিরের বোঁটাগন্ধ।
নিয়েছি টেনে প্রাণপণ ডাকসাইটে কেউটে-কদমতীব্র চেখেছি দেবীর কানপাশা।
চুড়ি-হার-চূড়া-কানকোপরতে পরতে উলুধ্বনি
প্রতিমা নিরঞ্জনা, শুনেছি এমনটাই নাকি বেশ্যাপাড়ায়, কালীমন্দিরের কাঠামো
প্রতিটি সন্ধ্যা ডবকা শূন্যবসনাকাত্যায়নী কালী, আসর তলায় নিত্য আরাধনা 
প্রতিরাতেই জাগ্রতমূর্তি, প্রহরে প্রহরে বাঁড়া-রতি হয়। তমসো মা জ্যোতির্গময়।



মহাকালে প্রকট হলেন আপনি
রীতিমতো সুন্দরী অশনি, নন্দী আর ভৃঙ্গী
তীরধনুক আপনার, পরগণার পর পরগণা
ঝুলছে ভারতবর্ষ, দু’দিকে সাঁওতাল জেলা

চিত্রকর ছবি আঁকছে আপনার চোলির ধকধক
রাজনৈতিক প্রভু ছবি আঁকছে ঘাঘরার ফিকফিক  
মন্ত্রী মহোদয় আপনার শায়ার ফিতে দাঁত বরাবর  

দুর্ধর্ষ তথাস্তু, চারশো চুয়াল্লিশ ভোল্ট ন্যুড
মায়ের বেশে, মায়ার বেশে ছদ্মবেশী থুতু দিলেন
ছুঁড়ে আমজনতার মুখে, ভারতবর্ষ চরম খুশি হলেন
আপনার প্রসাদ পেয়ে

খুশির ভারতবর্ষ ছবি আঁকছে এখন সাধক ভারতবর্ষ ধার্মিক ভারতবর্ষ
তুলির জিপার খোলা ভারতবর্ষ আঁকছে আপনার নুনুতুতো ঝাল-ঝোল
ছেনালিপনা

গেরুয়া শিল্পের একটা আলাদা দাম আছে,

তাই না?





আমি কিন্তু আপনার ছবি এঁকে খাই না

দেখি আপনাকে লুকিয়ে চুরিয়ে, সাধ মেটে না
আপনার ওপরে চড়াও হই রাতবিরেতে, আশ মেটে না

তৃতীয় পাণ্ডবের দক্ষতায়
ছেদ করি আপনার রহস্যময় নিশুতি, মধুর লাগে না হে, মধুরতম
ত্রিকাল বিশেষজ্ঞ গ্রীবাকাল, আপনার ঋতুসংহিতা ভেসে যায়
অলঙ্কারের ছলছুতায়

শেষমেশ কালসাপ আর দুধকলা চটকে
মেখে ফেলি কট্টর আতপ, উগ্রপন্থী ভোগ

সুজলা-সুফলা শঙ্খলাগা, ফুটে ওঠে আপনার শ্রীচরণ










ছায়া
মণিদীপা সেন




তুমি ছায়া ফেলে এগিয়ে যাচ্ছ। তোমার ডোরাকাটা ছায়ায় পিছু ফিরে চলে যাচ্ছে কেউ। তার জোব্বার পাইপিং-এ ঝুল খাচ্ছে আইভরি চিরুনি, পিন ভাঙা ব্রোচ থেকে শুরু করে কালো মার্জিনের লাল মেঝে, পাড়ার মোড়ের কাঁচমোড়া পি.সি.ও , গমকল।
তুমি ছায়া ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছ। হেঁটে চলেছ- বাজার। মুরগীর পুরীষ, মনিহারির তেল-সাবান, ফুচকার টক, পেস্ট্রির মসৃণতা চিনতে চিনতে শ্লথ হয়ে আসছ দ্বাদশ শ্রেণীর বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে। প্রতি মেয়েস্কুলের নিজস্ব ফেরোমন থাকে। পাশ দিয়ে গেলে, নাক টানলেই কাঁচাহাতের আঁচ, জোড়া বিনুনি ও ঈষৎ পরিপুষ্ট নাভির আভাস আসে। তুমি চোখের হিউমিড, শ্বাসে উড়িয়ে দিচ্ছ। দীর্ঘতর পথের আয়তন ছোটছোট স্কেলিং-এ ফেলে বাড়িয়ে নিচ্ছ সাফল্যের পোর্টেবিলিটি। মুছে দিচ্ছ পুরোনো গ্রিড লাইন। তুমি এগিয়ে যাচ্ছ।
তুমি সিঁড়ি বেয়ে উঠছ। দোতলার ম্যাজেনাইং ফ্লোরে একটা নয়-দশের বাচ্চা মেয়ে, ফ্ল্যাটের দরজা খুলে মুখ বাড়িয়ে, “তুমি কি আরও ওপরে উঠবে?” তুমি স্মিত, নিরুত্তর উঠে চলেছো। সামনে হঠাৎ একটা মেঠো ইঁদুর। নামছে। তোমায় দেখে থমকে গেল, ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে মুছে দিতে বাধ্য হল, যতটুকু পথ সে ফিরে এসেছিল।
তুমি উঠছ। তোমার সামনে ঝুটো সূর্য-পেছনে নতুন ছায়ারা জন্মেছে এতদিনে। উঠতে উঠতে তোমার পিঠ ঝুঁকেছে, ঘাড় নুয়েছে। তুমি থামতে চেয়েছ, তুমি নামতে চেয়েছ যতবার, তোমার নতুন ছায়ায় আশ্রিত কুচকুচে সরু, আড়াই হাত সরীসৃপটা মাথা ছড়িয়ে দিয়েছে, দৃঢ় হয়ে উঠেছে তার মাটিঘষাখাওয়া হাড়।
তুমি ছায়া টেনে টেনে এগিয়ে যাচ্ছ। তোমার কৃত্রিম ছায়ায় চকচক করছে দুটো বধির চোখ।





No comments:

Post a Comment